এল ডোরাডো


এল ডোরাডো

লেখক: মহাশ্বেতা দেবী।

আজকাল,প্রকাশনী, কলকাতা। প্রথম প্রকাশ, বই মেলা ১৯৯

লেখা লিখেছি তা কেউ বলেনি।

হ্যাঁ কেউ বলবে কেন? স্রোতস্বিনী নদীর মত বয়ে গেছেন কলরবে। একটা মিনি বুকে কত কথাই বলেছেন মহাশ্বেতা। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে এসে জন্ম মাটিকে না ভুললেও তিনি যে অতিথি তা ভুলে যাননি।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কেই সামনে রেখেছেন। লিখেন ,

বাংলা আকাদেমিকে ধন্যবাদ জানিয়েই বলি, ভারতীয় লেখকরা বলেছিলেন, আখতারের সঙ্গে ওই সন্ধ্যাটি কাটানো, ওঁদের বাংলাদেশ সফরে সবচেয়ে দামি অভিজ্ঞতা। বিবেক আরেকবার, আনন্দ আরও দু'বার যান। আমি তো প্রত্যহ গেছি।

এ লেখা যাঁরা পড়ছেন, তাঁরা তো ইলিয়াসকে অনেকেই চেনেন, ভালবাসেন, তাঁর বই পড়েন। আমি তো অনেককাল মনের মতো একটা গোটা মানুষ দেখি না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, পরবর্তীকালে সামরিক ও আধা-সামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন, মৌলবাদ সংক্রমণ, তার মধ্যে এই যে ইতিবাচক সংগ্রামী মানস মানুষদের যুদ্ধ করে চলা, এই নিরন্তর যুদ্ধমানতার প্রতীকী মানুষ আখতার।

ডান পা না থাকার ভীষণ সুবিধা, সে যেখানে ডান পা রাখত, সেই শূন্যস্থানে চায়ের কাপ রাখা যায়। ডানহাতের ফ্র্যাকচার? দেখুন আমি বামপন্থী হতে এখন বাইধ্য।

বাইধ্য শব্দটাকে কী আদর করেছেন লেখক। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে এমন মন্তব্য মহাশ্বেতা দেবী করতে পারেন। 

প্রধানমন্ত্রী, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানে যে নৈশভোজ আয়োজন করেন, তাতে আমাকেও ডাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত রিসেপশনে বা নৌকাভ্রমণে যেতে পারিনি। ভোজসভায় গেলাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার হাত ধরে লেখক বলে এমন বিমুগ্ধ প্রশংসা করেন, যে লজ্জায় পড়ে যাই। তাঁর দেওয়া মূল্যবান উপহারটিও সঙ্গে এনেছি। আমি একটি দুর্মূল্য ঢাকাই শাড়ি পরব। সেটা যে কত অবাস্তব, তা তো তিনি জানেন না। আমি জানি। কথায়, আচরণে আমার মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী খুবই মাটিছোঁয়া মানুষ। চলনে-বলনে কোনও অহংভাব নেই। ব্যক্তিত্ব ও সাহস আছে, অন্য এক প্রজন্ম বটে। শহিদ-জননী জাহানারা ইমাম, অথবা কিংবদন্তী রমণী বেগম রোকেয়া, বা জীবিত কিংবদন্তী সুফিয়া কামালের প্রজন্ম হয়ত এমন উত্তর-প্রজন্ম দুহিতাদের চেয়েছিল।

বাবার কর্মসৃত্রে রাজশাহীতে থেকেছেন বেশি। তাই আপ্লুত হয়ে লিখেন -

রাজশাহিতে যে আবার যাব, সে তো কখনও ভাবিনি। জন্মালাম ঢাকায়, থেকেছিও সেখানে, কিন্তু বড় হয়ে থেকেছি রাজশাহিতে বেশি। ম্যাট্রিকও দিই ওখান থেকে। ১৯৪২ সালে বোমাতঙ্কে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্র বদল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের কত না জায়গা বাবার কারণে ঘুরেছি, সরকারি কাজ মানেই জায়গা বদল। ময়মনসিং, ঢাকা, ফরিদপুর, রংপুর, দিনাজপুর, বাবাও বদলি হয়েছে। রাজশাহিতে ঠাকুরদা একটি বাড়ি কিনেছিলেন, সেখানে থাকতেন।

আমার মন এত চলমান ও বৈরাগী, যে স্মৃতির ভারে মন পিছনে হাঁটবে তা ভাবিনি আগে। কিন্তু মন হাঁটল।

আজ বিদেশ হলে কী হবে! এ যে জন্ম মাটি।

কাতর হয়ে লিখেন, হাজার চুরাশির মা উপন্যাসের লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী-

বুঝতে পারলাম,বাংলাদেশে আবার যেতে হবে। সম্ভব হলে বারবার। 

সময় পাব আমার জীবন, একটু সময় দেবে?

কালদেব মহাশ্বেতা দেবীকে সময় দিয়েছিল দুই হাজার ষোল সাল পর্যন্ত।

বুক রিভিউ : পার্থ প্রতিম নাথ

আরও পড়ুুন : কুতুব

parthiv

parthiv Means Earth Related. We Want To Learn Life Of Earth.

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال