শিলং জেলের ডায়েরি




বুক রিভিউ

বই :শিলং জেলের ডায়েরি

লেখক: সুরমা ঘটক


সুরমা ঘটক এর ডায়েরি উপন্যাস হতে পারতো। কেন পারেনি ? কারণ তার স্বামী ঋত্বিকঘটক ডায়েরি পড়ে বিশাল চিঠি লিখে জানান, এই ডায়েরির সাধারণতাই তার আবেদনের প্রাণবস্তু। তাই এই ডাইরিটা যেভাবে আছে সেভাবেই ছাপিয়ে ফেলা অবশ্য কর্তব্য।

 সাধারনের অসাধারণত্বে ভরপুর সুরমা ঘটকের জেল জীবন। পড়লে মনেই হবে না এ এক কমিউনিস্ট বিপ্লবীর জেল জীবনের ডায়েরি। মনে হবে দুর্গাপূজার কোন এক ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে আসছেন সুরমা ঘটক। মুরারিচাঁদ কলেজ পার হওয়ার পর মনে পড়লো  শিলং জেল জীবনের কথা। আর পাশে বসা আমাকে ছোট ভাই ভেবে একে একে বলে যাচ্ছেন জেল জীবনের কথা। ১৯ ৪৯ সালের ৩১ শে অক্টোবর জেলে প্রবেশ করলেন আর ভাগ্যগুনে মুক্তি পেলেন ১৯৫১ সালের ২৯ শে জুন।

 জেল জীবনের পুরোটাই জুড়ে রয়েছে নিরুপমা, অঞ্জলি ,কংফু,পার্বতীর মা,মনির মা, শের বাহাদুর  দেওপান এদের কাহিনী। পুরোটাই যেন মানব জীবনের সমস্যার কথা। তার নিজের জীবনের সমস্যার কথা কোথাও লেখা নেই। আছে ছিটেফোঁটা বিচ্যুতির কথা। তার নিজের যেমন কোনো অভাব অনটন নেই। সবই যেন সমাজের সমস্যা। আগে সমাজটাকেই বাঁচাতে হবে। সমাজ বাঁচলেই তিনি নিজেই বাঁচবেন । মানব জীবনের অচ্ছুত অংশ পতিতা,পাগলী ছিঁচকে চুর, এতিম, কিশোর, কিশোরী এসব মানুষের ছোট ছোট জীবন কথা। এদের জীবনের ব্যথা সুখ দুঃখ। কিন্তু প্রতিটি চরিত্র সরাসরি প্রবেশ করে মর্মে। তাই আপনি ডায়েরি পড়া ছেড়ে উঠতেই পারেন না। একবার ধরলে পড়া শেষ করতেই হবে আপনাকে। কোন ভণিতা ছাড়াই অবলীলায় মানুষের দুঃখ কষ্ট নিয়ে ভাবা যায়। জেলে বসে নিজের জীবনের কথা পরিবারের কথা না বলে সমাজের বিভিন্ন টুকরো টুকরো অংশের সুখ দুঃখ নিয়ে ভাবা যায় এবং তা নিয়ে সর্বক্ষণ উচ্চাশা পোষণ করা যায় একদিন এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে যেদিন সমাজের এই অবহেলিত অংশের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। সুরমা ঘটক তাই করে দেখিয়েছেন।

 রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনাও রয়েছে পরিমিত। যা যাপিত জীবন এবং বিপ্লবী জীবনকে আলাদা করে না । আছে শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা। ভাষার প্রতি সম্মান। একই গান বাংলা ইংরেজি হিন্দি খাসি ভাষায় গেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর হেমঙ্গদা সমৃদ্ধ করেছেন শিলং জেলের ডায়েরি।

সব কিছু ছাপিয়ে শিলং জেলের ডায়েরী যেন সমাজের অনাহুত মানুষের জন্য বিলাপ গাঁথা। এ যেন খাসিয়া অধিবাসীর গান-

 কোখুন জঙ্ঘা , সিংয়ের লাপালাং

 কোখুন বাব্রিউ, কোখুন লামফ্রাং।

 

খাসিয়া শব্দ  লাপালাং মানে হরিণ শিশুর জন্য হরিণমার কান্না। সুরমা ঘটক কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন পাঠককে।

আরও পড়ুন: কুতুব

রিভিউ: পার্থ প্রতিম নাথ


parthiv

parthiv Means Earth Related. We Want To Learn Life Of Earth.

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال