ভূতোর বিয়ে

ভূতোর বিয়ে
ভূতোর বিয়ে। নিমন্ত্রণ পেয়েছি। বরযাত্রী হতে পারিনি। বৌভাতের অনুষ্ঠান ছাড়ি কী করে? বুড়ি বার বার বলে গেছে এ আমার শেষ নাতির বিয়ে। অবশ্যই আসতে হবে । রঙ্গা, বঙ্গার বিয়েতে গিয়েছি। মজা পেয়েছি। আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানে মজা পাই না। তাই পারতপক্ষে যাই না। ভূতোর বিয়েতে বরযাত্রী এজন্যে হইনি। তবে বৌভাতে না গেলে মান থাকবে না। যে মুখপোড়া বুড়ি। বাড়ি এসে চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে যাবে। তাছাড়া ভূতোর বউকে একটা উপহার দেয়াতো চাই।

উপহার নির্বাচন করা মধ্যবিত্তের জন্য কঠিন কাজ। লোকে হাসবেও না, কাঁদবেও নাএমন একটা জিনিস চাই। তাছাড়া ভূতো আর আজকাল ভূতের চেহারার ভূতো নয়। বাজারে ভালো ব্যবসা বাণিজ্যের পসার। ভালোমন্দ খেয়ে ছোটবেলার ভূতরূপী ভূতো এখন গড়ের উপর কালভৈরব। বুড়ি বলেছে বউ নাকি খুব সুন্দরী পেয়েছে। নামটা আরও সুন্দর তুতো। এদেরকে উপহার হিসেবে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল দেয়া যায়। কিন্তু দাম যে বড্ড বেশি। টিসিবির লাইনে দাঁড়ালে একটু কমে পাওয়া যেত। সে উপায় নেই। টিসিবির লাইন এখন কার্ডের দখলে ।

’খান প্যালেস’ সিলেটের নামী দামী কমিউনিটি সেন্টার। ভূতোর বউভাত। কোন উপহার ছাড়াই আমি এসেছি। অবশ্য কাগজে লিখে এনেছি দুটো লাইন। খামবন্ধী কাগজখানা ভূতোর হাতে দিলাম। দারুন খুশি ভূতো ভেবেছে প্রাইজবন্ড বা নগদ। নতুন বউয়ের সাথে ছবি তুললো ভাড়াটে ক্যামেরাম্যান। ভূতো পরিচয় করিয়ে দিল, তুতো, ইনি আমাদের পাড়তুতো দাদা। আমরা একসাথে দুর্গাপূজা করি। গত পূজোয় আমি ট্রেজারার আর দাদা সেক্রেটারী ছিলেন। আমি বললাম আর বলতে হবে না ভূতো । খামে আমি ওসব লিখে দিয়েছি। সময় করে পড়ে নিও।

খানার টেবিলে বসেছি। এক ব্যাচ শেষ হয়েছে। পরিষ্কার অভিজান চলছে। বড় কষ্টে সিটটা পেয়েছি। পাশের সিটে ফণি মামাকে পাব ভাবতেই পারিনি। হাড়কিপ্টে একটা। নিশ্চই খালি হাতে ভরপেট খেতে এসেছে। আমাকে দেখে বলল, ভাগ্নে, বেশ ভারি খাম দিলে ভূতোর হাতে ! ভালো, খুব ভালো। লুটে পুটে খাও। সেক্রেটারী-ট্রেজারার তুমরাই তো খাবে। পদ কি আর এমনি এমনি পেয়েছ ? মা দুর্গা এই সামান্য বিষয় বুঝবেন না। অবশ্যই বুঝবেন। আমি গেলাম রেগে। বললাম ভূতো শালা একটা বাটপার। এক পূজো শেষ হয়ে আরেক পূজো এসে পড়েছে। আমার ভাগের টাকাটা এখনো দিল না। তাই আমিও মেরে দিয়েছি বাঁশ। উপহারের খামে লিখে দিয়েছি-‘ পূজোর মিষ্টি কেনা বাবদ লোপাটের এক হাজার টাকা হতে বিয়ের উপহারটা সমন্বয় করে নিও। আর আমার ভাগের বাকি টাকাগুলো শীঘ্র দিয়ে দিও।

ফণি মামা যখন মাথায় হাত দিয়ে দুগ্গা দুগ্গা করছে তখন আমি টের পেলাম থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। বিষয়টা এখন রঙ্গা, বঙ্গা, বুড়ি অব্ধি গড়াবে। ফণির ছোবল থেকে বাঁচা দায়। ভারাক্রান্ত মনে দুটো খেলাম। ফণি মামার আগেই উঠে পড়ব ভাবছি। আরে মামা যে হাওয়া ! জানি না আজ কপালে কি দুর্গতি আছে ? আগের বুড়ি আর নেই, বয়স যত বাড়ছে তেজ তত বাড়ছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। রঙ্গা, বঙ্গা দুইভাই বড় দুই দলে ভিড়েছে। বুড়ির পরিবারের লোক ক্ষমতায় থাকা একেবারে পাক্বা। সেই পরিবারের সাথে ফাজলামি। বিষয়টা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।

সিংহের কাছে ভাগ চেয়ে সিংহের খাবারে পরিণত হতে চলেছি। বুঝতে বড্ড দেরী করে ফেলেছি। শুনেছিলাম মেরুদন্ডহীন সেক্রেটারী হিসেবে ওরা এবারও আমাকে রেখে দিবে। সে চান্সে গুড়ে বালি। মায়ের ভোগেই লাগি কি না, কে জানে ? একটা ড্রিংকস্ হলে ভাল হত। ড্রিংকস্ জোনে গিয়ে দেখি ফনি মামা । রঙ্গা বঙ্গার সাথে আনন্দে মত্ত। ভয়ে আমার পিলে চমকে গেল। না পারি পেছাতে না পারি আগাতে। পা যেন আটকে আছে কঠিন জালে। ফণি মামা ডাকলেন আস ভাগ্নে আস। বঙ্গাকে বলেছি এবার তুমি হবে সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি। তুমার হাতেই লেখা হবে আমাদের দুর্গাপূজার ইতিহাস। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। জয় মা দুর্গা।

আরো পড়ুন : কৃষ্ণপুরে সিদ্দিকী হত্যা

লেখক: পার্থ প্রতিম নাথ

parthiv

parthiv Means Earth Related. We Want To Learn Life Of Earth.

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال