একটি অবাণিজ্যিক পরামর্শ

 

একটি অবাণিজ্যিক পরামর্শ

গ্রাণ্ড সুলতান, দি প্যালেস রিসোর্ট এসব প্রমোদ কেন্দ্র বানানো হয়েছে কাদের জন্যে? চা বাগানে বানানো রিসোর্ট চা শ্রমিকের জন্যে ? হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানানো রিসোর্ট প্রান্তিক মানুষের জন্যে ?মোটেই না। হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা এত বেআক্কল হয়নি যে চা শ্রমিক আর কৃষকের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে রিসোর্ট বানাবে। কৃষক, চাশ্রমিকদের পাতা কুড়ানো কিংবা ঘাস কাটার কাজ দেয়া যেতে পারে। এ কাজ পেয়েই শ্রমিকের জীবন ধন্য হয়ে যাবে। স্বর্গেও দাসের প্রয়োজন আছে।

দেশ বিদেশের বিভিন্ন কিসিমের মানুষ আসে এসব দামি হোটেল গুলোতে। উদ্দেশ্য কাজ অকাজের বাহানায় মজা লুটা। বেশি অর্থ ব্যয়ে রসনা চরিতার্থ করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘাঁটলে দেখা যায়, মাঝে মাঝে সেমিনার সিম্পোজিয়াম হয় উঁচু দরের। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তাদেরই দেখা যায় যাদের ওখানে থাকার বৈধ আয় বা ক্ষমতা নাই। চাকরী কিবা ব্যবসায়ে এক মাসের বেতনে  হোটেলে একদিন কাটাতে পারবে না সেসব লোকই পরিবার পরিজন নিয়ে এসব প্রমোদ কেন্দ্রে ভিড় জমায়। আর অন্তর্জালে ছবি দিয়ে বলে কি আরাম পেলাম। আমার স্ট্যাটাস কেমন দেখ ফকিন্নি বন্ধুরা। ভাবখানা এমন যেন আমি মেসিডোনায়ার রাজপুত্র ছিলাম আজ কপাল দোষে প্যালেসে থাকতে হয়।

ফেসবুকে টুইটারে দেয়া ছবিগুলো টোপের কাজ করে। এ ছবিগুলো বিষটোপের চেয়েও খারাপ। এবারের ছুটিতে অমুক বন্ধু প্যালেসে কাটিয়েছে। পরের ছুটি আমাকে কাটাতে হবে সিঙ্গাপুরে। প্রয়োজনে মানুষের গলা কাটব তবুও হারব না। এ বড় প্রেস্টিজের লড়াই । এ লড়াইয়ে জিততে হবে।

কোন প্রকৃতি প্রেম নয়। কোন ভ্রমণ পিপাসুর ভ্রমণ নয়। এ এক আসুরিক প্রবৃত্তি। সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে অসুখ আকারে দেখা দিয়েছে। এরা আত্মীয় স্বজন চিনে না। আত্মীয় স্বজন দূরে থাক নিজের বাড়ি বাবা মা সবার কথা ভুলে গেছে। ভ্রমণ্ এদের কাছে ফাও অর্থ উড়িয়ে নিজেকে জাহির করবার বিলাসিতা মাত্র। এই উদ্দেশ্যবিহিন নব্য ধনিক শ্রেণী র জন্যে  সুলতানী ব্যবসা গ্রাণ্ড সুলতান।

তাই একটা ফাও পরামর্শ প্রদানে এই লেখার অবতারনা। আপনারা যারা অম্রপালির রূপের নেশায় পাগল হয়েছেন তারা এবার থামেন। শিশুদের বিলাসিতার টাকা ওড়ানো না শিখিয়ে অন্তত পক্ষে ভ্রমণটা শেখান। প্রকৃতি থেকে বাতাস খাওয়া শেখান। তা্হলেঐ শিশু বড় হয়ে আপনার রক্ত খেতে চাইবে না। আজ গরীব থেকে হঠাৎ ধনী হয়েছেন তাই চোখে ঠুলি পড়ে গেছে। আপনার শিশু ভ্রমণ করতে করতে দেখবেন একদিন কিশোর, কিশোরী হয়ে উঠেছে। আর আপনার কোলে বসবে না। দাঁড়াবে মুখের সামনে চেখের সামনে। লুট করে আনা টাকার হিসাব চাইবে। তার স্মৃতি সজীব হয়ে থাকবে বিনা প্রয়োজনে হোটেলের নরম গদিতে শোয়ে পাঁচ টাকার ডিম পাঁচ হাজার দিয়ে কিনেছেন বিদেশি খাবারের নামে। আজ সে বড় হয়েছে অথচ আজ তাকে টাকা দিতে হিসাব চাইছেন। কই সে তো সেদিন প্রশ্ন করেনি বাবা তুমি এত টাকা পেলে কই ? তুমার বাবার কি টাকা বানানোর মেশিন ছিল ?

প্রকৃত ভ্রমণ পিপাসুদের সালাম জানালাম। আপনারা হিমালয় চূড়ায় চড়েন। আর সু বাতাস নিয়ে আসেন দূর হোক আমাদের অবক্ষয়।

 পার্থ প্রতিম নাথ

আরও পড়ুন :  উৎসব

 

parthiv

parthiv Means Earth Related. We Want To Learn Life Of Earth.

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال